কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল নিয়ে শঙ্কা

কর্ণফুলীর বালি উত্তোলনে ঝুঁকিতে কালুরঘাট সেতু

Passenger Voice    |    ১২:২১ পিএম, ২০২৪-০৩-১৩


কর্ণফুলীর বালি উত্তোলনে ঝুঁকিতে কালুরঘাট সেতু

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ডিসেম্বর থেকে সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হলেও সংকট ছিল শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু নিয়ে। নতুন সেতু নির্মাণের আগে পুরনো সেতুটি বিপুল ব্যয়ে সংস্কার শুরু করেছে রেলওয়ে। কিন্তু সেতুর চারপাশ থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনে ঝুঁকিতে পড়তে পারে সেতুটি। এতে ওই রেলপথে ট্রেন চলাচলও বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ বলছে, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় সেতু দিয়ে প্রতিদিন দুটির বেশি ট্রেন চলাচল করত না। তাও প্রতিটি ট্রেনের কোচের সংখ্যা ছিল চার-পাঁচটি। তবে সেতুটি মেরামতের ফলে বর্তমানে কক্সবাজার পর্যন্ত ২২-২৪টি কোচের সমন্বয়ে গঠিত রেক দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। প্রতিদিন দুই জোড়া ট্রেন চললেও ভবিষ্যতে এ সেতু দিয়ে কক্সবাজারে ট্রেন যাবে অন্তত ১১ জোড়া। ভারী ও দীর্ঘ ট্রেনগুলো চলাচলের জন্য সাময়িকভাবে সেতুটি সংস্কার করা হলেও বালি উত্তোলনকারীদের কারণে রেলওয়ের এ উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

কালুরঘাট সেতু সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত একজন প্রকৌশলী নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বলেন, ‘বুয়েটের পরামর্শে সেতুটি ভারী ট্রেন চলাচলের জন্য মেরামত করা হচ্ছে। কিন্তু সেতুর কাছে অবাধে বালি উত্তোলন করায় পিলারের মাটি সরে যাবে। শুরুতে সেতুটির ওপরের অংশ মেরামতের নকশা করা হলেও বর্তমানে পিলারের অংশে বালি ফেলে সেতুটি শক্তিশালী করা ছাড়া উপায় নেই।’ এভাবে বালি উত্তোলন করা হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক দেড় বছর ধরে কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট সেতু এলাকা থেকে বালি উত্তোলন বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বর্ষা ও গ্রীষ্ম মৌসুমে নোনা পানির প্রবাহ বেশি থাকায় শীতকালকে সামনে রেখে বালি উত্তোলন করেন প্রভাবশালীরা। সর্বশেষ শীত মৌসুমে শুরু হওয়া বালি উত্তোলন এখনো চলছে। প্রতিদিন কালুরঘাট সেতু এলাকা থেকে অন্তত ২০-২৫টি ড্রেজার ও বাল্কহেড বালি উত্তোলন করে।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘কালুরঘাট সেতু একটি বিশেষায়িত অবকাঠামো। নতুন এ রেল সেতু নির্মাণের আগে দীর্ঘদিনের পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুটি কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস পরিচালনা করতে মেরামত করা হচ্ছে। সেতুটির আশপাশে বালি উত্তোলন করা হলে নদীর তলদেশের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রেলওয়ের পক্ষ থেকে কালুরঘাট সেতু রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেয়া হবে।’

কালুরঘাটের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বালি উত্তোলনের কারণে এলাকাটি সাধারণ মানুষের বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। বালির স্তূপের কারণে সড়কের যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে। নদীর অন্য পাশের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলম ববি, মহিলা কাউন্সিলর জুবাইদা নার্গিস খানের ছেলে আশেক রসুল খান, হাসান বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হাসানসহ প্রভাবশালীরা বালি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত।

বালি উত্তোলনের অভিযোগের বিষয়ে কালুরঘাট খেজুরতলা বালি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের সমিতির সদস্য ৬০-৭০টি প্রতিষ্ঠান। রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী ও শীলক খালের বালি কাঠের নৌকায় করে চর খাজনা দিয়ে সরবরাহ ও বিক্রি করেন সমিতির সদস্যরা। তবে কালুরঘাট সেতুর চারপাশ থেকে কারা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’

প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধনের কারণে তড়িঘড়ি করে রেলওয়ে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কালুরঘাট সেতু মেরামতের উদ্যোগ নেয়। বুয়েটের তত্ত্বাবধানে মেরামতকাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে। আগস্ট থেকে কাজ শুরু করে আট মাসের মধ্যে সেতুটি ভারী ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী করে তুলবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আপাতত ট্রেন চলাচল করলেও সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হতে আরো অন্তত দুই মাস লাগবে। সেতুর ওপরের অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর ১৯টি স্প্যানে নদীর তলদেশে অন্তত ৬০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হবে। মূলত সেতুর তলদেশের স্প্যান থেকে মাটি সরে যাওয়ায় সেটি শক্তিশালী করতে জিও ব্যাগ ব্যবহার করবে রেলওয়ে। তবে সেতুর চারপাশ থেকে অবাধে বালি উত্তোলনের ফলে স্প্যানের মাটি সরে সেতুটির মূল কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবদুল মালেক বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী ও কালুরঘাট সেতুর কাছে বালি উত্তোলনের অনুমোদন দেয়ার প্রশ্নই আসে না। কালুরঘাট সেতু মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বালি উত্তোলন করা হলে ঝুঁকি আরো বাড়বে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। বালি উত্তোলন বন্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।’ সূত্র: বণিক বার্তা